আগে ভাবতাম আমার সুশিক্ষিত বাবা আমার সমকামিতা মেনে নেবে। কিন্তু আমার আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মা কে বোঝতে বেগ পেতে হবে। কিন্ত আসল ঘটনাটি একদম বিপরীত। স্কুলে থাকাকালীনই সমকামিতা আমাদের সমাজে স্বীকৃত নয় একটা পারিবারিক আলোচনাতে বাবা বলেছিল। আমার সিরিয়াল-প্রিয় মা তত দিন 'দোস্তানা', 'মেমরিস ইন মার্চ', দেখে ফেলেছে। আর তখন একটি হিন্দি জনপ্রিয় সিরিয়ালে (মর্যাদা/মরয়াদা, ইন্দ্রানী হালদার ছিলেন) অন্যতম প্রধান চরিত্র ছিল সমকামী। এবং মায়ের চরিত্রটির জন্য বেশ সহানুভূতি ছিল। সে দিনই বুঝেছিলাম মা তার সন্তানকেও বুঝবে। হ্যাঁ মা বুঝেছে। ... ...
এ লেখা তোমার কাছে যাবে, তুমি পড়বে, এ ভ্রমে আমি নেই। তবু যদি এই উড়োচিঠি হাজির হয় তোমার কাছে কোনোদিন, কোনোভাবে – নিজে থেকে শুধু মেসেজ কোরো ‘পড়েছি’। আমি তার পরিপ্রেক্ষিতে তোমায় কোনো কথা জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করব না। অর্ক, ভালবাসা তো প্রকাশ পেতে চায়। পৌঁছাতে চায় গন্তব্যে। অনেকের ভালবাসা সে পথে হাঁটা শুরুই করে না। আমাদের করেছিল। আমি বিশ্বাস করি করেছিল। কিন্তু মাঝপথে যেই হারিয়ে ফেলার কষ্ট তো যাওয়ার নয়। তবু তুমি ‘পড়েছি!’ জানালে, জানব, একসাথে না হোক, আমরা কোনো একভাবে গন্তব্যে পৌঁছলাম। ... ...
তোমার জন্য কিছুই করা হল না বাবা, কিছু কিনে দেওয়া হল না তোমায়। যে রাতে হঠাৎ তোমাদের সামনে নিজের সত্ত্বার কথা বললাম, তারপর মনে পড়ে না আর কতটুকু কী কথা হয়েছিল তোমার সাথে। পরে, মায়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম, তুমি নাকি খুব কেঁদেছিলে! আজ তুমি থাকলে তোমাকে আর মাকে সামনে বসিয়ে আরও একবার বোঝাতাম। তুমি বুঝতে তো, বাবা! ... ...
দুটো নাও ধীরে ধীরে ঢুকছে নদী থেকে সোতা খাল দিয়ে। একটার খোল জুড়ে আমড়া। আরেকটার বুকজুড়ে নারিকেল। ঘাটকুলের কাছ দিয়ে যেতে যেতে জলে ঢেউ ওঠে না। মেয়েটি হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে ভাটা মাছ তোলে। কাকিলা মাছ ঘোরে ফেরে। বড়শি ফেলে মেয়েটি গাইতে থাকে- দিয়া মোরে ফাঁকি রে আমার সোনার ময়না পাখি। বাতাস প্রবল হলে সুরটা বহুদূরে উড়ে যায়। সেহাঙ্গলের ঠোঁটায় এসে সুড় সুড় করে। কড়াইগাছে একটি তক্ষক অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। আর বাতাস মন্দ স্পষ্ট শোনা যায়- সোনার ময়না পাখিটি উড়ে যায়। ডানার শব্দ। আর কান্নার পুরণো কম্পন। বুঝতে হলে কান থাকা দরকার। ... ...
আমি তখন যুদ্ধক্ষেত্রে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। পায়ের একদিক থেকে রক্ত ঝরে যাচ্ছে তখনো, তবে বেশ কমে এসেছে। বাঁধন দিয়েই আটকেছিলাম। চারপাশে শুধু মানুষের স্তুপ। তার মধ্যেই আমার মত কয়েকজন ছটফট করছে। কারোর হাত, কারোর পা, কারোর মাথা চোট পেয়েছে। আর বাকি যারা পড়ে আছে, উঠছেনা, তারা সব মৃত মানুষ। মাঠটার চারপাশে কিছু গাছ ছিল। গাছগুলোতে এখন পাখির দল কিচমিচ করছে। মানে সন্ধ্যা হয়ে এল। এছাড়া সন্ধ্যা বোঝার উপায় এখনো নেই। আকাশটা লালচে হয়ে আছে। কনে দেখা আলো না কী বলে যেন! বেশ কিছু লোক হাতে গড়া মাচা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ... ...
যদিও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকরণ তার পূর্ণ রূপে এখনো বহুদূর, ছোট ছোট ধাপ নেওয়া হচ্ছে, কিছু সংলাপ শুরু হয়েছে। তবে এই সংলাপগুলোর বেশিরভাগই বৈচিত্র আর অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত নীতি বিষয়ক, নানান পরিচয়ের মান্যতা প্রদান, আর প্রান্তিক মানুষজনের প্রতি একটু আলাদা মনোযোগ যাতে তারা নানান জায়গায় চাকরি পেতে আবেদন করেন। বিশেষ করে স্টার্টআপ, নন-প্রফিট সংস্থা, ছোট ছোট ফর প্রফিট কর্মক্ষেত্রগুলো যেগুলো সামাজিক ন্যায় এবং অন্তর্ভুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ। এদের বেশিরভাগ কর্মখালির বিজ্ঞাপনগুলোয় লেখা হয় "আমরা সম-সুযোগে বিশ্বাসী চাকুরী দাতা এবং প্রান্তিক গোষ্ঠী যেমন প্রান্তিক জাতি, লিঙ্গ, যৌনতা এবং দক্ষতার মানুষদের আবেদন জানাতে উৎসাহিত করি।" কিন্তু, আমরা যখন "সমান সুযোগ"-এর কথা বলছি, আমরা কি ইক্যুইটি-র থেকে সরে যাচ্ছি? ... ...
যৌনকর্ম আর পাঁচটা পেশার মতই একটা পেশা মাত্র। কারখানার শ্রমিক গতর খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করেন, যৌন শ্রমিকও গতর খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। পিতৃতন্ত্র আমাদের শেখায় যৌনতা খারাপ, এবং নারী দেহ ভোগের বস্তু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে আর্থসামাজিক ভাবে দুর্বল মহিলাদের অসহায়তাকে হাতিয়ার করে তাঁদের কে পাচার করে নিয়ে আসা হয়, এবং যৌন দাসত্বে জোর করে ঢুকিয়ে শোষণ করা হয়। কারখানা-শ্রমিকদের যেটুকুও সামাজিক মর্যাদা আছে, সেটুকুও এনাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়। এই অবস্থার বদলের জন্যে ক্রমাগত আন্দোলন করে চলেছেন যৌনশ্রমিক মা বোনেরা। ... ...
আপাতদৃষ্টিতে এবং বাইরের লোকের চোখে (অর্থাৎ যারা ইনসাইডার নন, বা ইনসাইডারদের সাথে ভালো করে মেলামেশা করেননি) LGBTQIA+ (লেসবিয়ান গে বাইসেক্সুয়াল ট্রান্স কুইয়ার ইন্টারসেক্স অ্যাসেক্সুয়াল এবং অন্যান্য) একটা বৃহৎ ক্যাটেগরি হলেও এদের প্রত্যেকেরই সমস্যাগুলো আলাদা – যদিও কিছু ওভারল্যাপের জায়গাও থাকে। এই বৃহৎ এবং পৃথক গোষ্ঠীদের একসাথে আনার একটা সাধারণ যোগসূত্র হল, এঁরা মূলধারার যে সংখ্যাগুরু লিঙ্গ এবং যৌন পরিচয় – হেট্রোসেক্সুয়াল এবং সিসজেন্ডার বা বিষমকামী এবং স্বীয়লৈঙ্গিক – এই পরিচয়গুলো এঁদের নয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মত এই বর্গগুলির মধ্যে সম্পর্ক হয়তো সবসময় বৈরিতার নয় (যদিও সেটাও থাকতেই পারে), তবুও প্রত্যেকের সমস্যার লিস্ট এতটাই আলাদা এবং ডিস্টিংক্ট, যে এদেরকে সবসময় একসাথে একটিমাত্র বর্গ হিসেবে দেখাটাই অনেক সময় হয়ে দাঁড়ায় সমস্ত সমস্যার মূল। ... ...
নাম : অরিজিৎ চন্দ্র (ছদ্মনাম) বয়স : ২৩ কি করেন : স্নাতক কিন্তু এখনো বেকার যে দেশের নাগরিক : ভারত অর্থনৈতিক অবস্থা : অন্যের ওপরে নির্ভরশীল ... ...
আমি চাই লোকে আমাকে আমার গুণের জন্য চিনুক, আমি কেমন মানুষ সেই দিয়ে আমার বিচার হোক, আমার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন দিয়ে নয়। ... ...
আইডেন্টিটি বা পরিচয় কী? সমাজের দ্বারা নির্ধারিত না জৈবিক, নাকি দুইয়ে মিলেই, নাকি আরও অন্য কিছু? ম্যাকক্লস্কির ক্ষেত্রে সমাজ বা বায়োলজি, এ দুইয়ের বাইরে পরিচয় নির্ধারণের আরো একটা জায়গা রয়েছে, যা তাকে বলে দেয় কোনটা তার "আসল' পরিচয়। ম্যাকক্লস্কি স্বীকার করেন না যে মানুষের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট পরিচয় গাঁথা আছে যাকে বের করে আনাই মানুষের একমাত্র নিয়তি, বরং পরিচয় মানুষের স্বাধীনতার ফসল, যা সে নিজের পছন্দমত গড়ে নিতে পারবে। ম্যাকক্লস্কি বার বারই জৈবিক লিঙ্গ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শরীরের আর পাঁচটা অঙ্গের তুলনা দিয়ে থাকেন। কিন্তু কারুর চোখ কটা হলে সেটা তো তার গোটা সমাজের সাথে সম্পর্ক স্থির করে দেয় না, যেমনভাবে দেয় তার লিঙ্গ পরিচয়, ফলে এই তুলনাগুলো কিছুতেই মানুষের অর্ডারের ধারণাকে টলাতে পারে না। ... ...
কবে থেকে আপনি জানতে পারলেন যে আপনার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন অন্যদের থেকে আলাদা? (যেমন ধরুন ছোটবেলায় কি ধরণের খেলনা আপনার পছন্দ ছিলো সেখান থেকেই শুরু করতে পারেন।) উত্তর -- আমি ছোটবেলায় বার্বিডল নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসতাম। ঠিক কবে যে বুঝতে পারলাম যে আমি একজন 'গে' তা অবশ্য মনে করতে পারবোনা। মানে, অনেক ছোট থেকেই আমি ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতাম, কিন্তু 'গে' শব্দটা তো শিখলাম আমার চৌদ্দ বছর বয়েসে। ...... ... ...
না, আমি এখন সেক্সচেঞ্জ সার্জারির কথা ভাবিনা। আমাকে সার্জিক্যাল ছুরি দিয়ে কেটে ফেললেও আমি আমার এই গোপন কথা কাউকে বলতে পারবোনা। আমি জানি যে শরীর বদলানো সম্ভব হলে, আমি সত্যি করে একজন ছেলে হলে ভীষণ ভীষণ প্রেমিক, ভীষণ রোম্যান্টিক, ভীষণ সুখী একজন হতাম। কিন্তু, আমি কাউকে একথা জানাতে পারবোনা। হয়তো আমার মধ্যে বোল্ডনেসের অভাব আছে। ... ...
তবুও শেষপর্যন্ত আমি এইটুকু বুঝেছি যে এই মিছিল অন্তত আমার নিজের মনের মধ্যে থেকে অনেক দ্বিধাকে দূর করেছে, এল জি বি টি সমাজের অন্যান্য অংশকে স্বীকার করার, শ্রদ্ধা করার সাহস এনে দিয়েছে। ... ...
মনো¢বজ্ঞানের ভাষায়, রূপান্তর কামনা এক¢ট অসুখ যাতে ¢কছ¥ মানুষ তাঁদের জন্মলব্ধ °দ¢হক নারীতÆ বা পুরুষতেÆর স® মান¢সক একাত্মতা অনুভব করেন না। ... ...
আগে আমি নিজের মধ্যে এই একটা সমকামী সত্ত্বা আছে এটা ভাবলে খুব অস্বস্তি বোধ করতাম, এমনকী চেপেও রাখতে চাইতাম, বা পারলে কোনভাবে এটা পাল্টে ফেলতে চাইতাম। আবার সমকামিতা নিয়ে কোন কথা উঠলেও আমার শুনতে খুব অস্বস্তি লাগত। ... ...
পৃথিবীতে এক একজন মানুষ থাকেন যাঁদের অতি দূরত্বেও থাকেনা কোনো পরিত্রাণকারী। সময়ের উপর্যুপরি প্রহারে যখন পিঠ ঠেকে যায় অন্তিম দেওয়ালে, তখন স্রেফ অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই তাকে তার মত করে ফুঁসে উঠতে হয়। বিস্ফোরণের মত ফেটে পড়তে হয় প্রহারকের ওপর। সে প্রহারক ব্যক্তিবিশেষই হোক বা সমাজ! ... ...
যত টাকা থাকলে সরকারী হাসপাতালে হেনস্থা হবার বিপর্যয় (বোধহয় শব্দটির ভুল প্রয়োগ হলো, কারণ এটাই সত্যি যে হেনস্থা হওয়াটাই সেখানে ঘটনা, "দুর্ঘটনা' নয়) আমাদের ঘাড়ে নিতে হত না, ততটা আর্থিক স্বচ্ছলতা আমাদের ছিলনা। ... ...